তেলাকুচা

তেলাকুচা গাছের পরিচিতি

তেলাকুচা নাম প্রায় সর্বত্র প্রসিদ্ধ। Cucurbitaceae ফ্যামিলির এই উদ্ভিদটির বৈজ্ঞানিক নাম Coccinea cordifolia এ লতাজাতীয় উদ্ভিদটি বাংলাদেশের সব জায়গায় প্রচুর পরিমাণে উৎপন্ন হয়। অনেকে একে শাক হিসেবে ব্যবহার করেন। এর পাতাগুলো গাঢ় সবুজ বর্ণের এবং কোমল। ফুলগুলো সাদা। ফলগুলো প্রায় পটোলের মতো। পাকলে সুন্দর রক্তবর্ণ ধারণ করে। 

তেলাকুচা দুই ধরনের। এক প্রকার তিতা এবং অপরটি মিষ্টি। আয়ুর্বেদ শাস্ত্রমতে, তিতাটিকে তেলাকুচা এবং মিষ্টিটিকে তু-কেরী বলা হয়। ওষুধে তিতাটিই ব্যবহার করা হয়। এর সবকিছুই ব্যবহৃত হয়।


কিভাবে খাওয়া যায় ?

শাক তোলার পর তাজা শাক ভাল করে পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। এই শাক অন্যান্য শাকের মত তেল, মরিচ, পেয়াজ, লবন দিয়ে ভেজে খাওয়া হয়। এলাকাভেদে রান্নায় হলুদ-মরিচ বা অন্য মশলা স্বাদ মতো মেশানো যেতে পারে। টাকি মাছ বা ছোট মাছ দিয়ে ঝোল রেঁধে এটি খাওয়া যায়। আদিবাসী ডালুদের ভেতর শাক সিদ্ধ করে লবন-মরিচ মিশিয়ে খাওয়ার রেওয়াজ আছে। 


তেলাকুচার ভেষজ ব্যবহার
  •  তেলাকুচার তিক্তরস ও মধুর রস শীতবীর্য, শ্বাস-কাশ, জ্বর, রক্তদোষ, ডায়াবেটিস, অরুচি ও পিপাসানাশক, উদরী, পাকস্থলীর রক্তস্রাব, জ-িস ও পেটফাঁপা, রক্ত ও সাদা আমাশয়, বায়ু ও পিত্তনাশক। 
  •  এটি বিষক্রিয়ার ক্ষেত্রে বমনকারক দ্রব্যের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ভেষজ। পেটে এমন কিছু গেছে যে এখনই বমি করানো দরকার। এক্ষেত্রে ৫-৬ চামচ পাতার রস খাইয়ে দিলে বমি হয়ে পেট থেকে অবাঞ্ছিত বস্তু বেরিয়ে আসবে। 
  •  ত্তবৃদ্ধিজনিত হাতে-পায়ে জ্বালা হলে এর পাতার রস মর্দনে জ্বালার শান্তি হয়। 
  •  রক্ত আমাশয়ে বা সাদা আমাশয়ে এর পাতার রস চিনিসহ সেবনে উপকার হয়। ৩-৪ চামচ রস প্রতিদিন একবার করে খেলে আমজনিত শোথ কমে যায়। তবে মূল রোগ আমাশয়কে আগে সারাতে হবে। 
  •  সর্দিজনিত জ্বরে পাতা ও মূলের রস ২-৩ চামচ একটু গরম করে সকাল-বিকাল খেলে ২-১ দিনেই জ্বরভাব কেটে যাবে। তেলাকুচা সর্দিজ্বরের প্রতিষেধকও। 
  •  ঋতু পরিবর্তনের ফলে, বিশেষ করে শীতের আগে ও পরে যাদের সর্দিজ্বর হয়, তারা যদি আগে থেকেই এ পাতা ও শেকড়ের রস একটু গরম করে সকাল-বিকাল সেবন করে, তবে এই জ্বরাক্রমণের ভয় থাকে না। 
  •  ৩-৪ চামচ রস গরম করে খেলে বুকের বসা সর্দি উঠে গিয়ে শ্লেষ্মাজনিত শুষ্ক কাশি, হাঁপানির মতো অবস্থা সেরে যায়। শেকড়ের শুষ্ক ছাল ২৫-৩০ গ্রাম মাত্রায় সেবন করলে শক্ত সর্দিও আরাম হয়। সর্দির কারণে অরুচি দেখা দিলে সিদ্ধ পাতাকে ঘি দিয়ে রান্না করে খেলে অরুচি দূর হয়। 
  •  তেলাকুচার পাতা ও মূলের রস ২-৩ চামচ পরিমাণ একটু গরম করে সকাল-বিকাল খেলে ৩-৪ দিন পর থেকে ডায়াবেটিসে উপকার পাওয়া যায়। 

Comments

Popular posts from this blog

নয়ন তারা

কালমেঘ

বহেড়া